আজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ায় বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নৃশংসভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।
এদিকে ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীকে ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর ম্যাসাকার দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতিবছর এই দুটি দিবস বিশেষভাবে পালিত হবে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকালে প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকাসহ দেশের সব শিল্পকলা একাডেমিতে ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। ঢাকার প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন আবরার ফাহাদের বাবা।
শিল্পকলা একাডেমির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে শহীদ আবরার ফাহাদের জীবন ও কর্মের ওপর বিশেষ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘আবরার ফাহাদ : বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নয়া প্রতীক ও আমাদের সংস্কৃতি’। এ ছাড়া আবরার ফাহাদের সাহস আর সংগ্রামকে উপজীব্য করে নির্মিত বিশেষ ডকুমেন্টারি ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ সারাদেশের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে একযোগে দেখানো হবে।
ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ উপস্থিত থাকবেন এবং হারানো সন্তানের স্মরণে বক্তব্য দেবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন)। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক দীপক কুমার গোস্বামী।
২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতে হওয়া চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ।
এর জের ধরে ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।
তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় সব মিলিয়ে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর পর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গত ১৬ মার্চ মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ের সময় থেকেই তিনজন পলাতক। তারা হলেন, মোর্শেদ-উজ-জামান, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মুনতাসির আল (জেমি) গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান।
এ মামলায় সব মিলিয়ে দণ্ডিত ২৫ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক বলে রায় ঘোষণার দিন (গত ১৬ মার্চ) জানিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে গত ৫ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মেধাবী ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় ‘নিপীড়নবিরোধী দিবস’ ঘোষণা ও তা যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানায়।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শাখাভিত্তিক আলোচনাসভা ও দোয়া অনুষ্ঠান, ক্যাম্পাসে নিপীড়নবিরোধী সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন, ফ্যাসিবাদী আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ এবং ক্যাম্পাসে নিপীড়ন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি করা।
All rights reserved © 2024
Leave a Reply