জেন-জি আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে কেপি শর্মা অলি প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।
২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালনকালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরমধ্যে বেরিয়ে এসেছে ,কার্কির স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় আগে একটি বিমান ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দেন।
১৯৭৩ সালের দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি ভারত সীমান্তের ওপার থেকে একটি টুইন-ইঞ্জিন বিমান ছিনতাই করেন। এরপর সেখানে থাকা প্রায় ৪০০,০০০ ডলার নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
জানা যায়, নেপালি কংগ্রেসের তৎকালীন যুব নেতা সুবেদী, ১৯৭৩ সালের ১০ জুন সুবেদিয়া নগেন্দ্র ধুঙ্গেল এবং বসন্ত ভট্টরাইকে সঙ্গে নিয়ে এই বিমান ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দেন। রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের ১৫ যাত্রীবাহী বিমানটি বিরাটনগর থেকে কাঠমান্ডু যাচ্ছিল, যা নেপালের ইতিহাসে প্রথম হাইজ্যাকের শিকার হওয়া বিমান।
এই ছিনতাইয়ের পেছনের উদ্দেশ্য ছিল নেপালের রাজা মহেন্দ্রের নেতৃত্বে রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি সশস্ত্র বিপ্লবের তহবিল সংগ্রহ করা। এই অভিযানের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন গিরিজা প্রসাদ কৈরালা, যিনি পরবর্তীতে গণতান্ত্রিকভাবে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
সুবেদিয়া তার স্মৃতিকথা 'বিমান বিদ্রোহ'-তেও এই ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। সেখানে তিনি নেপালি কংগ্রেসের ইতিহাস এবং দেশটির রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন সম্পর্কেও কথা বলেন।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, এই ছিনতাইকারী দল যাত্রী হিসেবে বিমানে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিমানটি যখন উড্ডয়ন করে তখন তারা বিমানের মাঝপথে পাইলটকে বন্দুক দেখিয়ে বিহারের ফোর্বসগঞ্জ এলাকায় অবতরণ করতে বাধ্য করে, যেখানে তাদের আরও পাঁচজন অপেক্ষা করছিল।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাও সেই টাকার অপেক্ষায় ছিলেন। ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য তিনি তিন বছর জেল খেটেছেন বলেও জানা গেছে।
সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮ জানিয়েছে, রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের এই বিমানে বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেত্রী মালা সিনহাসহ ১৯ জন যাত্রী ছিলেন। বিমানটিতে নেপালের সরকারি ব্যাংকের প্রায় ৪০ লাখ রুপি ছিল ।
বিমানটি তারা বিহারের ফোরবেসগঞ্জে অবতরণে বাধ্য করেন। এরপর বিমান থেকে ৪০ লাখ রুপি নামিয়ে সেগুলো গাড়ি দিয়ে দার্জিলিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেই অর্থ নেওয়া হয় নেপালে। মানিকন্ট্রোল অনুসারে, বাকি যাত্রীদের কোনো ক্ষতি না করেই পরে বিমানটি আবার উড্ডয়ন করতে দেওয়া হয়।
এদিকে, দুর্গা প্রসাদ ও তার সহযোগীদের পরবর্তীতে মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে, ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিমান ছিনতাই করে অর্থ নেওয়ার পুরো পরিকল্পনাটি সাজান নেপালি কংগ্রেসের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা গিরিজা প্রসাদ কৈরালা। তিনি পরবর্তীতে নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন। সবমিলিয়ে চারবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
ভারতের বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দুর্গা প্রসাদের সঙ্গে সুশীলা কার্কির পরিচয় হয়। তাদের ঘরে এক সন্তানও রয়েছে।